নদিয়ার তেহট্টে SSC XI-XII পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস কাণ্ডে গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থী

তেহট্ট হাই স্কুল
Tehatta High School 

নদিয়া জেলার তেহট্ট থানা এলাকায় একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থার সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রবিবার দুপুরে, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন, বেতাই উচ্চ বিদ্যালয়ে এক পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ফলে স্কুল প্রাঙ্গণে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তেহট্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে, যার ভিত্তিতে পুলিশ এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত যুবকের নাম প্রবীর বিশ্বাস, এবং তার কাছ থেকে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার তাকে তেহট্ট আদালতে তোলা হবে বলে জানা গিয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করলে জানা যায় যে, রবিবার তেহট্ট থানা এলাকায় দুটি ভিন্ন স্থানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপিত ছিল। একটি কেন্দ্র ছিল বেতাই ডক্টর বিআর আম্বেদকর কলেজে, আর অন্যটি বেতাই হাই স্কুলে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়াকড়ি করা হয়েছিল। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশের আগে বিস্তারিত তল্লাশি করা হচ্ছিল। মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা কোনো অননুমোদিত উপাদান না থাকলে তবেই তাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল। এই নিয়মগুলি পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন করলে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ হয়।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর, ডক্টর বিআর আম্বেদকর কলেজে কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বেতাই হাই স্কুলে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টা পরেই উত্তেজনা তৈরি হয়। সূত্রমতে, স্কুলের একটি কক্ষে পরীক্ষা চলাকালীন এক পরীক্ষার্থীকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কোনো মেশিন ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই ডিভাইসটি সম্ভবত পরীক্ষার উত্তর সরবরাহ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল, যা পরীক্ষার নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে ওই কক্ষে এবং পুরো স্কুলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষার্থীরা, শিক্ষকরা এবং পর্যবেক্ষকরা সকলে বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এমন ঘটনা পরীক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করে এবং অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করে।

খবর পেয়ে তেহট্ট থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষসহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন, যার ভিত্তিতে প্রবীর বিশ্বাস নামক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডিভাইসটি অত্যাধুনিক, যা সম্ভবত ব্লুটুথ বা ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে বাইরের সাহায্য গ্রহণ করতে সক্ষম। এই ধরনের ডিভাইসগুলি পরীক্ষায় প্রতারণার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে, যা শিক্ষা বোর্ডের নিয়মাবলীতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম ঘোষ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আজ বেতাই হাই স্কুলে সেকেন্ডারি স্কুল লেভেল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা চলছিল। সেই সময়ে আমাদের কাছে হেডমাস্টার, পরীক্ষা ইনচার্জ এবং সেন্টার অবজার্ভার থেকে একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগে বলা হয়েছে যে, প্রবীর বিশ্বাস নামক এক পরীক্ষার্থী বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় মোবাইল ফোন বা অনুরূপ ডিভাইস ব্যবহার করছিলেন। আমরা স্পেসিফিক অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত শুরু করেছি।” তিনি আরও যোগ করেন যে, প্রিলিমিনারি তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তের প্রকৃত নাম, বাড়ির ঠিকানা ইত্যাদি যাচাই করা হচ্ছে।

পুলিশের তদন্তে আরও জানা যায় যে, কেন্দ্রে প্রবেশের সময় যারা তল্লাশি করছিলেন, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতিরিক্ত এসপি বলেন, “যারা গার্ডিং বা চেকিং করছিলেন, তাদেরও তদন্তের আওতায় আনা হবে। আমরা সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করব যাতে পুরো ঘটনার সত্যতা উন্মোচিত হয়।” ডিভাইসটি কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বা কীভাবে এটি কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হয়েছে, সে সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগে উল্লেখ নেই যে কে প্রথম এটি দেখতে পেয়েছে, কিন্তু পরীক্ষা ইনচার্জ এবং সেন্টার সুপারভাইজারের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে যে, তদন্তের অগ্রগতির সাথে সাথে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

এই ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন কেস নয়, বরং সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতারণার প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আজকাল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দৌলতে পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন করা সহজ হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোন, স্মার্টওয়াচ, ব্লুটুথ ইয়ারপিস ইত্যাদি ডিভাইসগুলি ব্যবহার করে বাইরের সাহায্য নেওয়া যায়, যা পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে। শিক্ষা বোর্ড এবং সরকারকে এই ধরনের ঘটনা রোধ করার জন্য আরও কড়া নিয়মাবলী প্রয়োগ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, জ্যামার ডিভাইস ব্যবহার, সিসিটিভি মনিটরিং এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে অধিক সংখ্যক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা যেতে পারে।

অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরও দায়িত্ব রয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা সততার পথ অনুসরণ করে। পরীক্ষায় সফলতা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রমই একমাত্র উপায়, অসাধুতা নয়। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ রোধ করা দরকার। পুলিশের তদন্ত শেষ হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা অন্যদের জন্য সতর্কতা হিসেবে কাজ করবে।

সার্বিকভাবে, এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা উন্মোচিত করেছে এবং সকলকে সচেতন করে তুলেছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি আরও নিরাপদ এবং স্বচ্ছ হবে, যাতে প্রকৃত মেধাবীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন। 
পূর্বের পোস্ট
No Comment
Add Comment
comment url