২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, কিন্তু এখনও এক মাসও পার হয়নি। তাঁর আনুষ্ঠানিক অভিষেক এখনও এক মাস দূরে। কিন্তু হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার আগেই ট্রাম্প একজন স্বৈরশাসকের মতো মিডিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। লক্ষ লক্ষ ডলারের মানহানির মামলা উদারপন্থী মিডিয়া আউটলেটগুলির বিরুদ্ধে দায়ের করা, তাদের অপমান করা, তাদেরকে ফেক নিউজ বলে ট্যাগ করা, সোরোস-ফান্ডেড বলে অভিহিত করা ইত্যাদি। ঠিক সেই সময়ে এই মিডিয়া হাউসগুলির কয়েকটি কোর্স সংশোধন করতে শুরু করেছে। বাংলা ভাষায় বললে, তারা গোদিতে বসতে শুরু করেছে।
পাগলা ট্রাম্প মোদীর মতোন ভালো বইয়ের পৃষ্ঠাতে স্থান পাওয়ার জন্য প্রথমে এগিয়ে এসেছে আমেরিকান ব্রডকাস্ট কোম্পানি অর্থাৎ এবিসি নিউজ। ট্রাম্পের সঙ্গে একটি মানহানির মামলা মিটিয়ে ফেলার জন্য এবিসি নিউজ ৫ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হয়েছে। এখন এটি অ্যাঙ্করের ভুল স্বীকার করার জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার ছিল নাকি অন্যকিছুর জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার, এ নিয়ে আজও আমেরিকায় আলোচনা চলছে। আমেরিকা নিজেকে গণতন্ত্রের মাতা বা পাঠশালা বলে মনে করে। বিশ্বকে গণতন্ত্রের পাঠ শেখায়। কিন্তু আজকের তারিখে সেখানে কেউ ট্রাম্পকে অসন্তুষ্ট করতে চায় না। এজন্য অ্যাপল, অ্যামাজন, মেটা-এর মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলির সিইওরা আজকাল ট্রাম্পের পায়ে লুটিয়ে পড়ছেন, আত্মসমর্পণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে এবিসি নিউজও সেই একই কাজ করেছে। আদালতে লড়াই করার চেয়ে টাকা দিয়ে দাও। নিজের অ্যাঙ্করের জিভের স্লিপের জন্য সরি বলে দাও এবং বিষয়টি সেখানেই শেষ করো। কিন্তু এমন কখনও হয় না। স্বৈরশাসকদের সঙ্গে কখনও আলোচনা র বিষয়বস্তু শেষ হয় না। একবার স্বৈরশাসক রক্তের স্বাদ পেলে তারও নেশা লেগে যায়।
ঠিক ১০ মাস পরে ট্রাম্প এখন সেই একই এবিসির গলা ধরে আছেন। এবার তাঁর লক্ষ্য বিখ্যাত আমেরিকান লেট নাইট হোস্ট এবং কমেডিয়ান জিমি কিমেল। আসলে গত সপ্তাহে জিমি কিমেলের জনপ্রিয় শো লেট নাইট শোকে ডিজনি অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করেছে। আমেরিকায় যখন কোনও শো অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড হয়, তখন সাধারণত তা আর ফিরে আসে না। ঘটনা এমন যে, কিছু রিপাবলিকান নেতা এবং তাদের মধ্যে ডানপন্থী অ্যাকটিভিস্টরা কিমেলের উপর অভিযোগ করেছেন যে তিনি তাঁর শোতে চার্লি কার্ককে উপহাস করেছেন। তাঁকে অপমান করেছেন। যদি আপনি না জানেন যে চার্লি কার্ক কে এবং তাঁর হত্যা আমেরিকাকে কীভাবে দু'টুকরো করে দিয়েছে, তাহলে এই ঘটনা নিয়ে ইউটিউবে অনেক ভিডিও বা নিউজ আছে সেগুলো দেখে নিতে পারেন।
এখন রিপাবলিকানরা কার্কের মৃত্যুর জন্য উদারপন্থী এবং ডেমোক্র্যাটদের দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন। প্রচুর রাজনীতি খেলা হচ্ছে। কিন্তু কিমেল কার্ক সম্পর্কে কী বলেছেন যাতে তাঁর চাকরি, তাঁর পুরো ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে এসেছে।
এখন ভাবুন রাজনীতি কীভাবে খেলা হয়? রিপোর্টার কার্কের মৃত্যু সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন। ট্রাম্প চাচা উত্তর দিয়েছেন যে বলরুম হোয়াইট হাউসে খুব ভালোভাবে তৈরি হচ্ছে। কিমেল এই বাইটটি তুলে নিয়ে উপহাস করেছেন। তাহলে ট্রাম্প চাচা রাগে ফেটে পড়েছেন এবং শো বন্ধ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। বলছেন যে কার্ককে উপহাস করা হয়েছে। যদিও আসলে উপহাস করা হয়েছে ট্রাম্পের। স্পষ্টতই আমেরিকা কয়েকদিনের মধ্যে বুঝতে পেরেছে যে জিমি কিমেল তাঁর সমালোচনামূলক মন্তব্যে কার্কের বিরুদ্ধে নয়, বরং ট্রাম্প এবং ম্যাগা বেসের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেছেন। যারা এই মৃত্যুকে রাজনীতিকরণ করে রাজনীতি খেলছেন। যদি এই পুরো ঘটনায় কিছু সত্যিই আঘাতকর বা অপমানজনক হয়ে থাকে, তাহলে তা হল ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নাচ, তাও চার্লি কার্কের স্মৃতিসভায়। তাঁর বিধবার সঙ্গে এটাই তাঁর স্মৃতিসভা। এটাই তাঁদের নৈতিকতা।
আজকের তারিখে ট্রাম্পের ভক্তরা এত অন্ধ হয়ে গেছে যে যদি ট্রাম্প নিজে এসে চার্লিকে গালাগালি দেন, তাহলে তাঁরা বলবেন না না, এটা তো ভালোবাসার গালাগালি। এটা তো ঘনিষ্ঠতা, এটা তো ভালোবাসার চিহ্ন। কিন্তু ভাবুন কিমেলের একটা খারাপ সময়ের কৌতুক তাঁর জন্য কত ভারী পড়েছে। কারণ নতুন আমেরিকায় যার লাঠি তার বুলডোজার। ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা আছে এবং যদি ট্রাম্প ঘনিষ্ঠরা মনে করেন যে কিমেলের ভাষা তাঁদের আঘাত করেছে, তাহলে বুলডোজার চালানো হবে। তাহলে কী হল? এই ছোট্ট বিষয় থেকে আমেরিকার এফসিসি অর্থাৎ ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন ট্রিগার হয়েছে। তাদের চেয়ারম্যান ব্রেন্ডন কার এবিসি নিউজকে খোলাখুলি ধমকি দিয়েছেন। চিন্তা করুন আমেরিকা, গণতন্ত্রের মাতা, কী ধমকিবাজি চলছে।
আই মিন উই ইজি ওয়ে চেঞ্জ টেক অ্যাকশন ফ্র্যাঙ্কলি অন অ্যাডিশনাল ওয়ার্ক ফর দ্য এফসিসি। আমেরিকায় এফসিসি টেলিভিশন ব্রডকাস্টারদের লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ করে এবং এখানে তার চেয়ারম্যান একটি চ্যানেলকে খোলাখুলি ধমকি দিচ্ছেন যে বস, দেখো যদি কিমেলের উপর অ্যাকশন না নাও, তাহলে তোমার লাইসেন্সের কিছু হয়ে যেতে পারে। এই ধমকির পরে প্রথমে চালু হয়েছে সেখানকার কিছু টিভি স্টেশন কোম্পানি নেক্সস্টার এবং সিনক্লেয়ার। এই কোম্পানিগুলি কারের পডকাস্টের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটি প্রেস রিলিজ জারি করেছে এবং বলেছে যে তারা তাদের লোকাল স্টেশনগুলিতে জিবি কিলের শো এয়ার করবে না।
অর্থাৎ যদি এবিসি নিউজে এই শো চালানো হয়, তাহলে আমরা আমাদের লোকাল টিভি স্টেশন লোকাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এটাকে পাস হতে দেব না এবং তার জায়গায় অন্য কোনও প্রোগ্রামিং চালাব। মনে রাখবেন আমেরিকায় লোকাল টিভি স্টেশনগুলি বড় ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক, স্যাটেলাইট বা ফাইবারের মাধ্যমে ফিড নেয় এবং তারপর লোকাল ট্রান্সমিটার বা কেবল অপারেটরের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের কাছে এই টিভি প্রোগ্রাম পৌঁছে দেয়। আজও আমেরিকায় টিভি দেখার এটাই একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এই টিভি স্টেশন এবং সরকারের চাপে এসে এবিসি নিউজও পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমে তো কারের ধমকি ছিলই। তারপর এই লোকাল স্টেশনগুলি বলেছে যে আমরা এই প্রোগ্রাম সরিয়ে দিচ্ছি। তাহলে এবিসি কিমেলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করেছে। ভাবুন একজন এমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী অ্যাঙ্কর, যাঁর শো এবিসি নিউজে ২২ বছর ধরে চলছে। অর্থাৎ দায়িত্বশীল মানুষই হবেন যিনি ২২ বছর ধরে শো করছেন। কিন্তু ভাবুন তাঁকে এক ঝটকায় অফ এয়ার করে দেওয়া হল। তাও কোনও ব্যাখ্যা ছাড়া, কোনও সতর্কতা ছাড়া। স্বাগতম নতুন আমেরিকায়। যে গণতন্ত্র এবং ফ্রি স্পিচের পাঠ বিশ্বকে শেখায়, তার এই অবস্থা আজ। একটা সময় ছিল যখন স্বৈরশাসকরা বন্দুক-কার্তুজ নিয়ে লোকেদের ভয় দেখাতেন। আজকের যুগে স্বৈরশাসকরা তাদের হাত একদম পরিষ্কার রাখেন। সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়। চাপের কৌশল প্রয়োগ করা হয়। পাবলিক ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়। বিজনেস চাপ, অপ্রত্যক্ষ চাপকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিজনেসকে, টাকাকে অস্ত্র বানানো হয়েছে। কিমেলের শো সাসপেনশনের সঙ্গে ট্রাম্পের কোনও সম্পর্ক নেই। এটাই হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল সংস্করণ। আমরা কিছু করিনি। কিন্তু তাঁর শো বন্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে ট্রাম্পকে খুব খুশি দেখাচ্ছে।
হি ব্যাড রেটিংস মোর দ্যান এনিথিং এলস হি হরিবল থিং অ্যাবাউট অ্যা গ্রেট জেন্টলম্যান ট্যালেন্টেড পার্সন। রেটিংস হি ল্যাক অফ ট্যালেন্ট।
যে কথা এবিসি নিউজ বলতে চায় না এবং যাকে ট্রাম্প ল্যাক অফ ট্যালেন্ট বলে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, তা আমরা আপনাদের বলে দিচ্ছি। সেই কথা যা কিলের সমর্থনে আসা আরেক লেট নাইট হোস্ট বলেছেন। লেট নাইট টিভি শো হোস্ট জন স্টুয়ার্ট এই পুরো আমেরিকার ঘটনা খুব সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
লেট মি টেল হাউ ইট ওয়ার্কস। দ্যায়ার সমথিং কল্ড অ্যা ট্যালেন্ট ওমিটার। ইটস অ্যা কমপ্লিটলি সায়েন্টিফিক ইনস্ট্রুমেন্ট দ্যাট ইজ কেপ্ট অন দ্য প্রেসিডেন্টস ডেস্ক। অ্যান্ড ইট টেলস দ্য প্রেসিডেন্ট হোয়েন অ্যা পারফর্মার্স টেক ইউ ট্যালেন্ট পোশন। মেজার্ড মোস্টলি বাই নাইসনেস টু দ্য প্রেসিডেন্ট। গোজ বিলো সার্টেন লেভেল পয়েন্ট এফসিসি মাস্ট বি নোটিফাইড অ্যাকুইজিশন বিলিয়ন নেটওয়ার্ক দেভ লার্জার মেগা কর্পোরেশন লাইসেন্সেস বেসিক সায়েন্স।
এখন আমেরিকায় যা হচ্ছে, তা আসলে পুরো বিশ্বে এইভাবে সেন্সরশিপ চলে এসেছে গত কয়েক বছরে। আসলে এবিসি নিউজ বিখ্যাত ইউএস মিডিয়া কংগ্লোমারেট ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির একটি অংশ। এই ডিজনি একটি বড় ইউএস স্পোর্টস ব্রডকাস্টার ইএসপিএনকেও মালিকানা করে। সেই ইএসপিএন যা সম্প্রতি আমেরিকার ন্যাশনাল ফুটবল লিগের সঙ্গে একটি বড় চুক্তি সই করেছে। এই চুক্তির অধীনে এনএফএল ইএসপিএনে ১০% ইকুইটি স্টেক নেবে যা প্রায় ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের। এর বদলে ডিজনিকে এনএফএল নেটওয়ার্ক, রেড জোন, ফ্যান্টাসি ফুটবলের মতো অ্যাসেট পাবে। তাহলে খুব বড় চুক্তি। কিন্তু এখানে একটা বড় টুইস্ট আছে।
আসলে গত মাসে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের অ্যান্টি-ট্রাস্ট ডিভিশন এই ব্লকবাস্টার চুক্তির পর্যালোচনা শুরু করেছে। অর্থাৎ ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই পুরো চুক্তিকে সূক্ষ্মভাবে তদন্ত করবে যে এটা পাবলিক ইন্টারেস্টকে আঘাত করে কি না, এটা মিডিয়া মনোপলি তৈরি করে কি না। এখন ফাইল খুলতেই ইএসপিএন এবং ডিজনির এক্সিকিউটিভরা কংগ্রেসম্যান এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অফিসিয়ালদের খাতিরদারিতে লেগে যান। অর্থাৎ লবিং করতে শুরু করেন যে কোনওভাবে এই মেগা চুক্তিতে সরকারি কোনও বাধা না আসে। এখন যেখানে একদিকে ডিজনির লোকেরা ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে মসকা মারছিলেন, অর্থাৎ লবিং করছিলেন, সেখানে জিবি কেবিল এই বিষয়টিকে বিগড়ে দিতে শুরু করেছে। ট্রাম্পকে ক্ষতি করতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিজনি কী করবে। তাৎক্ষণিকভাবে তারাও জি হজুরিতে লেগে যান এবং জিমি কিমেলকে অফ এয়ার করে দেন। এখন কতটা সরাসরি ধমকি পেয়েছে? কতটা ফোন কল হয়েছে। আপনি নিজেই বুঝে নিন।
যাইহোক, ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং এফসিসি এই বছর ঠিক এই স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে আরেকটা বিখ্যাত লেট নাইট শো বন্ধ করিয়েছে। এই বছরের জুলাই মাসে সিবিএস নিউজ তাদের লেট নাইট শো ডিসকন্টিনিউ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এই শো আমেরিকার বিখ্যাত স্টিভেন কোলবার্ট হোস্ট করেন যা এখন ২০২৬ সালের মে মাসের পরে রিনিউ করা হবে না। জিমি কিমেলের মতো স্টিভেন কোলবার্টও তাঁর শোতে ট্রাম্প এবং ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের উপর প্রচুর জোকস করেন। স্যাটায়ার দিয়ে তাঁদের সমালোচনা করেন। লোকেদের সচেতন করেন। কিন্তু যতই হাস্যরসাত্মক হোক না কেন, ট্রাম্প সহ্য করতে পারেন না যে কেউ তাঁর উপর প্রশ্ন তুলছে। উপহাস করছে। ট্রাম্পের টিম অপ্রত্যক্ষভাবে হলেও। আমি সরাসরি বলছি না। সিবিএসের উপর চাপ দিয়ে কোথাও না কোথাও নিশ্চিত করেছে যে এই শো রিনিউ না হয়। অফিসিয়াল সংস্করণ হল এটা বিজনেস সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোনও হাত না থাকলেও দেখুন ট্রাম্প এই ক্যানসেলেশনকে কীভাবে উদযাপন করছেন।
তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে উদযাপন করে লিখেছেন যে কোলবার্টের যাওয়ায় তাঁকে অত্যন্ত আনন্দ হয়েছে এবং পরের বার জিমি কিবেলের। ভাবুন মাসখানেক আগে সতর্কতা এসে গিয়েছিল। সেই সময় লোকেরা বলেছিল যে ট্রাম্প এমনই ব্র্যাগ করছে। কিন্তু দেখুন এক এক করে সবার কাছে আসছে। আপনাকে আবারও দ্রুত মনে করিয়ে দিই যে এসব সেই দেশে হচ্ছে যার পরিচয় হল লিবার্টি। বছরের পর বছর ধরে আমেরিকা ফ্রিডম অফ স্পিচ, এক্সপ্রেশন, ফ্রি প্রেসের মতো মূল্যবোধের স্বঘোষিত দূত হয়ে বসে আছে বিশ্বে। বছরের পর বছর লোকেরা বিশ্বের স্বৈরশাসক এবং অত্যাচারীদের থেকে বাঁচতে আমেরিকার দিকেই যেত। আজ আমেরিকা নিজেই স্বৈরতন্ত্রে আটকে পড়ছে। এটাই সেই দেশের অবস্থা। কিন্তু সিস্টেম যতই বদলাও, যে দেশের লোকেরা বছরের পর বছর এই স্বাধীনতাকে গলায় লাগিয়ে রেখেছে, তারা এত সহজে এই স্বাধীনতাকে যেতে দেবে না। তাঁদের জন্য ট্রাম্পের প্রেম আছে, হতে পারে, কিন্তু নিজের দেশের মূল্যবোধের থেকে বেশি প্রেম নয়। তাহলে স্বাভাবিক যে একটা পাবলিক আউটরিচ তৈরি হচ্ছে।
কেভিল অফ এয়ার হতেই আমেরিকান রাজনীতিতে যেন কোলাহল শুরু হয়ে গেছে। ডেমোক্র্যাটিক নেতা থেকে টিভি হোস্ট, কমেডিয়ান, হলিউড অ্যাক্টর, কিছু রিপাবলিকান ল মেকার তাঁদের পার্টির বিরুদ্ধে গিয়ে এটাকে ফ্রি স্পিচের উপর আক্রমণ বলছেন। ট্রাম্পের এই ইঙ্গিতকে সমালোচনা করছেন। কেমেলের সমর্থনে প্রথমে আসেন তাঁর ফেলো লেট নাইট হোস্ট যেমন স্টিভেন কোলবার্ট, জন অলিভার, সেথ মেয়ার্স, জিমি ফ্যালন, জন স্টুয়ার্ট। তাঁদের সঙ্গে ডেলি শোর পুরো টিম লেগে যায়।
উই আর অল জেমি আই এম সেন্সরশিপ আমেরিকা আমেরিকাসিভ এবিসি দিস দেভ ক্লিয়ারলি চিল্ড বুক ইফ ইউ গিভ মাউস।
যেখানে একদিকে আমরা দেখছি মিডিয়া মিডিয়াকে জীবন্ত খেয়ে ফেলছে। স্যাবোটেজ করছে। অন্যদিকে আমরা দেখছি কীভাবে আমেরিকায় লেট নাইট অ্যাঙ্কররা একে অপরের সমর্থনে আসছেন। যদিও এই বললে তাঁদের শোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ওয়েল গাইজ দ্য বিগ স্টোরি ইজ দ্যাট জিমি কিমেল ওয়াজ সাসপেন্ডেড বাই এবিসি আফটার প্রেশার ফ্রম দ্য এফসিসি লিডিং এভরিওয়ান থিঙ্কিং ডব্লিউটিএফ অর অ্যা লট অফ পিপল আর ভেরি দ্যাট উইপ সেট উই ওয়ান্ট সে দ্যাট উইল বি সেন্সরড বাট আই এম গোয়িং কভার দ্য প্রেসিডেন্ট ট্রিপ টু দ্য ইউকে জাস্ট লাইক আই নর্মালি উড ওয়েল গাইজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাস্ট অপ হিজ থ্রি ডেকেবলি প্রেসিডেন্ট মিলিটারি আই।
ট্রাম্পকে নোবেল পিস প্রাইজ না দিলেও কমেডি প্রাইজ অবশ্যই দিতে হবে। দেশের কমেডিয়ানদের উদ্ধার করেছেন ট্রাম্প। কোথায় পাবেন এত ফ্রি কনটেন্ট?
ওয়ান ডে হিস্টরি অফ দ্য টাইম উই আর লিভিং থ্রু ইজ গোয়িং টু বি রিটেন হোয়েন ইট ইজ আই এম নট ইটস ইন দিস আর ইভেন কম অফ দ্য ডোন্ট গেট মি রং। দে গোয়িং টু কম অফ দ্য বেটারিল মনি জাস্ট দিস ইফ উই নাথিং এলস দিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেকেন্ড টার্ম সো আই ডোন্ট থিঙ্ক উই হ্যাভ দেভিং লাঞ্চ মনি মেক গো কম ব্যাক হ্যাং ইচ টাইম দে আর নেভার গোয়িং টু স্টপ দে লিটলি সে ওপেনলি আফটার সাসপেনশন অ্যান্ড সেথ টু টোটাল লুজ অন ফেক নিউজ এমবিসি দ্যায়ার রাইটিং আর অলসো হরিবল ডু ইট এনবিসি।
এটাকে বলে ইউনিটি আই মিন ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড। যেখানে একটা মিডিয়া হাউস বা একটা গ্রুপ যদি সরকারের চাপে ঝুঁকে যায়, তাহলে বাকি মিডিয়া হাউসগুলি, বাকি জনতা তাদের দায়িত্ব যে তার সমর্থনে দাঁড়িয়ে একটা আওয়াজ তুলবে, গণতন্ত্রের আওয়াজ। এটা নয় যে একটা মিডিয়া হাউস সরকারের পায়ে হাঁটু গেড়ে বসলে অন্যরা দেখে সরকারের পায়ে ঝুঁকে পড়বে। শো বন্ধ করবে, জার্নালিস্টকে অফ এয়ার করবে, নিজেরা কিছু টাকার জন্য সরকারের গোদিতে বসে যাবে। এটা দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব নয়। এটা দেশভক্তি নয়। এটা জাতীয়তাবাদ নয়। এটা আত্মসমর্পণ। প্রেসের কাজ হল জনগণের জন্য আওয়াজ তোলা, সরকারকে আয়না দেখানো যা আজকের সময়ে চাপের পরেও আমেরিকান মিডিয়া অনেকটা করে দেখাচ্ছে। এবং বিশ্বাস করুন সব অথরিটেরিয়ান রেজিমের শুরু হয় শুধু একটা আওয়াজ দমন করে।
পুতিনের রাশিয়া দেখুন, ভিক্টর অরবানের হাঙ্গেরি দেখুন। যদি আপনি কোনও দেশকে সফলভাবে স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হতে দেখতে চান, তাহলে শুধু সরকারকে ফ্রি স্পিচ এবং ফ্রি প্রেসের উপর নিয়ন্ত্রণ দিন। তারপর কয়েক বছরের মধ্যে দেখবেন কীভাবে লিডারশিপ স্বৈরতন্ত্রে পরিবর্তিত হয়ে যায়। আপনাকে মনে করিয়ে দিই রাশিয়া, চায়না, হাঙ্গেরি এমনকি উত্তর কোরিয়ায়ও নিয়মিত ইন্টারভ্যালে নির্বাচন হয়। আপনি তাদের স্বৈরতন্ত্র বলতে পারেন না। কিন্তু তাদের ফলাফল বছরের পর বছর পরিবর্তন হয় না। সেই একই আসে।
জিমি কিলের শো বন্ধ করার যে চেষ্টা হয়েছে যাতে সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। জিমির জোকস দমন করতে পারে, সেই ক্লিপগুলি বানিয়ে সেই এপিসোডের অংশগুলি আমেরিকা জুড়ে লক্ষ লক্ষ লোক দেখেছে। এবং বাকিদের কাছে এই কথা পৌঁছচ্ছে কারণ ভাবুন ৪০০-এরও বেশি হলিউড সেলিব্রিটি। হ্যাঁ, একটা দেশ আছে যেখানে মুভি স্টাররাও কথা বলে। ৪০০-এরও বেশি হলিউড সেলিব্রিটি বলেছে যে সরকারের এই সিদ্ধান্ত, তারা এর বিরুদ্ধে। অবশেষে লোকেরা নিজেরা এগিয়ে আসে। কী করে? হাজার হাজার মানুষ ডিজনির সাবস্ক্রিপশন ক্যানসেল করতে শুরু করে। কোম্পানিটা সমালোচনা পায়। তার শেয়ার প্রাইস আঘাত পায় এবং ভাবুন এক সপ্তাহের মধ্যে এবিসি নিউজকে জিমি কেমেলকে শোয়ে ফিরিয়ে আনতে হয়। এটাই জনতার শক্তি। এটাই একতার শক্তি। ডোন্ট আন্ডারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অফ কমন। অনির্দিষ্টকালের সাসপেনশনের এক সপ্তাহের মধ্যে এবিসি নিউজ পাবলিক চাপকে উপেক্ষা করতে পারেনি। জিমি কেল আবার অন এয়ার হয়ে যান।
ট্রাম্প কিমেলকে ক্যানসেল করার চেষ্টা করেছেন। পাবলিক সেন্টিমেন্ট তার বিরুদ্ধে করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু দাবার গুটি বা পাশা উল্টো পড়েছে। এখন কিমেল আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে। কিমেলের হৌসলে আরও বেশি বুলন্দ দেখাচ্ছে। আমরা তো আশা করি যে এই ব্যানের পরেও আলটিমেট সরকারি চাপ সত্ত্বেও কিমেল সেই কাজ করবেন যা তিনি গত ২২ বছর ধরে করে আসছেন এবং তা হল সরকারের কাছে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন করা। তাও একটা লাইট হার্টেড হিউমারাস ওয়েতে। এবং সরকারে যেই থাকুক ওবামা হোক বা ট্রাম্প হোক বা বাইডেন হোক। ছোটখাটো ইউজাররাও জিমির মিমেল, স্টিভেন কোলবে, জন স্টুয়ার্টকে অনেক বছর ধরে দেখেছি। তাঁদের থেকে প্রেরণা নিয়েছি। এবং আজ তাঁদের তানাশাহির বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেখে অন্তত একটা সলিডারিটি লাগছে যে চলো অবস্থা সবার একই। সবার অবস্থা টাইট। সবাই লড়ছে। কিন্তু এটাও সত্য যে তানাশাহির বিরুদ্ধে লড়াই কখনও এক ঝটকায় শেষ হয় না। লড়াই আমেরিকায়ও এখনও চলছে।
জিমির শো এখনও আমেরিকায় অনেক জায়গায় ব্রডকাস্ট হচ্ছে না। কারণ টিভি স্টেশন নেটওয়ার্ক নেক্সটার এবং সিনক্লেয়ার এখনও কিমেলকে ব্লক করছে লোকেদের কাছে পৌঁছতে। এবং তারা এই ব্লক হটানোর মুডে নেই। এবং এখানে আসে ব্যবসা। সিনক্লেয়ার একটা ডানপন্থী নেটওয়ার্ক যা ট্রাম্পকে ডোনেট করে এবং নেক্সট স্টারের একটা মেগা মার্জার এখন এফসিসির হাতে এবং তারা কোনওভাবেই এই বড় চুক্তিকে হাতছাড়া করতে চায় না। ট্রাম্প চাচাকে রাগ করাতে চায় না। আমেরিকান বিজনেস যা আজ ইউএসের টপ মিডিয়া হাউসের মালিক হয়ে বসে আছে। তাঁরা এখনও মনে করে যে ট্রাম্পের একটা ডিমান্ড মেনে নাও চুপচাপ বসে যাও তাহলে পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁদের জানা নেই যে পপ আজ টোটাল কন্ট্রোল চান। আমেরিকান মিডিয়া, আমেরিকান কোম্পানি, আমেরিকান ইনস্টিটিউশন, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান লোকেদের মনে তাঁর বিরুদ্ধে উঠা প্রত্যেক আওয়াজকে ট্রাম্প দমন করতে চান। এই কথা আমরা বলছি না। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই বলেছেন।
আই হেট মাই অপোনেন্ট অ্যান্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট দ্য বেস্ট ফর দেম। আই এম সরি। দেন কনভস মিট আই স্ট্যান্ড মাই অপোনেন্ট।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর অপোনেন্টদের আওয়াজ দমন করার জন্য ট্রাম্প শুধু মিডিয়া হাউসের বিরুদ্ধে যাচ্ছেন না। আজ ট্রাম্প টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের কন্ট্রোলও তাঁর ডানপন্থী বন্ধুত্বপূর্ণ বিলিয়নেয়ারদের হাতে দিতে চান। এক্স আগে থেকেই ইলন মাস্কের কাছে যিনি খোলাখুলি ডানপন্থী। মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গও ট্রাম্পের সামনে তাঁর সিটি পিটি গুল হয়ে যান। আগামী দিনে ট্রাম্প এই কোম্পানিগুলির মাধ্যমে ডানপন্থী প্রোপাগান্ডা সাধারণ জনতার কাছে আরও ছড়াবেন। অন্য পক্ষের পোস্টগুলিকে দমন করার চেষ্টা করবেন। তাদের সরানোর চেষ্টা করবেন। এখনও আমেরিকান কোর্ট অপোজিশন ইনস্টিটিউশন থেকে বেশি অ্যামেজিং জিনিস হল যে আমেরিকার লোকেরা গণতন্ত্রকে, ডিসেন্টকে, ফ্রি স্পিচকে জীবিত রেখেছে। জিমি কেবিলের ঘটনা দেখাচ্ছে যে বিরোধী যতই শক্তিশালী হোক, ধনী হোক। আলটিমেট পাওয়ার তো লোকেদের হাতে। যদি জনতা সচেতন হয়।
প্রশ্ন হল আপনি এবং আমরা কি সেই পরিমাণ সচেতন যতটা আজ হওয়া উচিত? আমরা কি আমাদের দেশের জন্য সেই কনভার্সেশন করছি? আমরা কি আমাদের রাইটস এবং ফ্রিডমের জন্য সেই পরিমাণ লড়ছি যতটা লড়া উচিত? এই প্রশ্ন নিজেকে জিজ্ঞাসা করা একটু জরুরি হয়ে উঠেছে।